স্মৃতির পাতায় অতীত জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা | পুষ্পকলি.কম

                              স্মৃতির পাতায় 
                   অতীত জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা 

-লেখক সাজ্জাদ আহমাদ

সাজ্জাদ নিম্ম মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান।সাধারণ চলাফেরা।কারো সাথে তেমন কথাও হয় না। সর্বদা একা থাকতে পছন্দ করে।অন্য দশজনের মতো আড্ডাবাজিতে তাকে দেখা যায় না।সময়মতো মাদ্রাসায় আসে।আবার সময়মতো বাসায় ফিরে যায়।তাকে নিয়ে তার বাবার অনেক স্বপ্ন।সে তার বাবার বড় সন্তান।তার আশা সে ইঞ্জিনিয়ার হবে।কুরআন-হাদীসও জানা দরকার।তাই ছোট সময় থেকেই সে তাদের এলাকার একটি আলিয়া মাদ্রাসায় পড়ছে।প্রথম প্রথম তেমন একটা পড়াশোনায় মনযোগী ছিল না।কিন্তু এখন যথেষ্ট সজাগ। ক্লাসের প্রথম সারির ছাত্র।সাদামাটা মনের অধিকারী।সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলে। শিক্ষকদের ও খুব মান্য করে। কিছুদিন পরে তাকে কোন কারণে শহরের এক মাদ্রাসায় চলে যেতে হল । কয়েকজন বন্ধু মিলে থাকার জন্য একটি বাসা নিল। বাসা থেকে তার যথেষ্ট দূরেই।মা-বাবা তার লেখাপড়ার প্রতি খুব খেয়াল রাখেন। যখন যা প্রয়োজন তা পূরণ করতে চেষ্টা করেন।

 সাহিত্যের প্রতি তার প্রবল আগ্রহ রয়েছে।কিন্তু সাহিত্য সাধনার তেমন কিছুই নেই।অনেকেই মাঝে মধ্যে লেখার প্রতি উৎসাহিত করেছে। কিন্তু সে কিছুই করতে পারেনি।অবশ্য বই পড়ার প্রতি সে খুব আগ্রহী।বইটাই যাই পড়া হয় সব নিজের হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে। মা-বাবা খুব নিষেধ করেন বই কিনতে,কিন্তু ততদিনে তার নেশা ধরে গেছে।বই ছাড়া তার সময় কাটতেই চায় না। বইয়ের মাধ্যমে একদিন এক ছাত্রের সাথে সাক্ষাত হয়।তখন সাজ্জাদ ক্লাসের তৃতীয় ছাত্র আর তার সহপাঠী খালিদ প্রথম ছাত্র।ধীরে ধীরে তাদের মাঝে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।হঠাৎ সে জানতে পারে খালিদের সম্পাদনায় এটি হাতের লেখা পত্রিকা বের হচ্ছে।খালিদ সাহিত্যে যথেষ্ট হাতপাকা।ইতোমধ্যে ৩ সংখ্যা বের হয়ে গেছে।তারপর থেকে সে তার নিয়মিত সদস্য।লেখা,মেধা, বুদ্ধি দিয়ে সর্বাত্মকভাবে প্রচারের কাজ করছে। এ ক্ষুদ্র পত্রিকাটি তার সামনে স্বপ্নের বদ্ধ দুয়ার খুলে দেয়। হাজারো স্বপ্ন কে বিকশিত করে বিভিন্নভাবে।আর পত্রিকা তার মতো করেই সম্মুখপানে এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে৷এগিয়ে যাচ্ছে তার স্বপ্নচূড়ায়। দিন দিন সদস্য সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।তার সম্পূর্ণ কাজ হচ্ছিল হাতে-কলমে উপরের প্রচ্ছদ থেকে শেষের লাইন সবই হাতে-কলমে। যার কারণে তা ছাত্রদের ক্ষুদ্র মহলে খুব প্রভাব ফেলে। মানুষ অবাক হয়ে যে অত ছোট ছোট ছোকড়ারা একটা আস্ত পত্রিকা প্রকাশ করছে।পঞ্চম সংখ্যা বের হওয়ার পর হঠাৎ কোনো কারণবশত পত্রিকা কিছুদিনের জন্য বিরতি নেই।সাজ্জাদ আর খালেদের সম্পর্ক স্বাভাবিক ভাবেই চলছে আজো। এখনো টুকটাক কথা বার্তা হয়।আর সাজ্জাদ লেখালেখিও শুরু করেছে যথেষ্ট যত্নের সাথে। মাঝে মধ্যে গল্প কাহিনী লিখতেও ভুলে না।নিজের জীবনের স্মৃতি গুলো ডাইরির পাতায় লিপিবদ্ধ করতে শিখে গেছে অনেকটা।কিন্তু আলী সহ আরো অনেকেই এই পত্রিকার ছোট্ট বিরতি মেনে নিতে পারেনি। আমাদের দেশের অধিকাংশ পত্রিকা চলতি পথে থেমেছে। তবে তাদের আশা ছিল অন্য ইতিহাস গড়ার। ইচ্ছে ছিল শত শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে,হাজারো বিপদ-আপদ মাড়িয়ে,দুর্যোগ মোকাবেলা করে তাদের পত্রিকায় এগিয়ে চলবে তার মূল গন্তব্য। প্রত্রিকার ধারাবাহিক পথ চলা সবার বুকের আশা ছিল।অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে তার থমকে দাঁড়ায়।যা কেউ সহ্য করতে পারেনি, বিশেষভাবে সাজ্জাদ। কারণ এটাই ছিল তার জীবনে বাস্তবে পরিণত হওয়া প্রথম স্বপ্ন।যার জন্যে সে তার সর্বাত্মক দিয়ে কাজ করছিল নিজেকে ভুলে। যার কারণে ক্রমেই তাদের সম্পর্কের মাঝে ভাটা পড়ে।একে অপর থেকে দূরে সরে যায়।এখন আর আগের মতো কথা হয় না। সবাই নিজের মত চলাফেরা করে। কিছুদিন পর দু'জনের সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়। একে অপরকে ভুলে যায়।সম্পর্কটা অতীত হয়ে যায়। সবকিছু সময়ের জোয়ারে বিলীন হয়ে।আগের মত হাসি ঠাট্টা, আড্ডাবাজি,পত্রিকা নিয়ে দুষ্টুমি, উচ্চতর সাহিত্য পত্রিকা পড়া ও পত্রিকা সংগ্রহ করা তাড়নায় বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে যাওয়া সবই শেষ হয়ে যায়।শুধু উভয়ে উভয়ের পানে দিনভর চেয়ে থাকে।কোন কথাই হয়না।তবে কারো কলমই থেমে নেই।তা চলছে তার আপন গতিতে।খালিদ আগে থেকেই লেখালেখিতে যথেষ্ট পরিপক্ক।আর সাজ্জাদ ততদিনে অনেক পথে এগিয়ে গেছে।অনেক কিছু লিখতে জানে‌ লিখে ফেলে। নিজের মনের যত কথা আবেগ অনুভূতি তা লিখতে শিখেছে এবং লিখে ফেলে।

এভাবেই হয়তো কোন দিন তাদের বন্ধুত্ব প্রাণ ফিরে পায়নি। উভয়ের কেউই তাকে প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার নূন্যতম প্রয়োজন বোধ করেনি। সবাই সবাইকে ভুলে গেছে, কিন্তু কারো ডাইরির পাতাই তা ভুলেনি। হঠাৎ একদিন সাজ্জাদ পত্রিকার এক প্রচ্ছদ শিল্পীর সাথে অনেক কথা বলার মাঝে পত্রিকার আলোচনায় আসে। কিন্তু সাজ্জাদ ততদিনে পত্রিকার নামটাও ভুলে গেছে। সে তার নামটা বলতে পারেনি। তখন উভয়ে অবাক হয়ে যায়। সাজ্জাদ নিজের ডায়রির পাতা খুলে তার অতীত স্মৃতি স্মরণ করতে চায়। হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো মনে করতে চাই। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে পত্রিকা কাজে ব্যস্ত সময় গুলো স্মরণ করতে চাই।

সাজ্জাদ এখন সম্পুর্ন একা। একাকীত্বকেই  নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় সঙ্গী বানায়। বিকালে যখন হাঁটতে বেরুয়।তখন কাউকে বলে না চল ঘুরতে যাই। একা একাই অনেকটা পথ হাঁটে, আবার মেসে ফিরে আসে।একা একা তার স্থানে বসে থাকে সারাদিন। সারাদিন শত সহস্র চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। আর রাতে ঘুমানোর পূর্বে তার আত্মার অনুভব অনুভূতি, কথন ও দহনগুলো নিজের ডাইরিকে অকপটে বলে ফেলে।বলা হয় না শুধু ভাব ও অনুভূতি। তবে ঘটিত ঘটনাবহ সবই লিখে রাখে।

লেখক:সাজ্জাদ আহমাদ

তারিখ:10/09/19

👆

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url