মহিলাদের সম্পর্কে হাদীস | রাসূলে আকরাম (সা.) এর বাণী | PUSHPKOLI
রাসূলে আকরাম (সা.)-এর বাণী
(মুসলিম মহিলাদের জন্য)
(সহীহ ইবনে হিব্বান হাদিস নং-৪১৩৯)
২. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযি.) বলেন. একবার মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদেরকে সম্মোধন করে ইরশাদ করেন, তোমরা বেশি বেশি দান খয়রাত করো। যদিও তোমাদের অলংকারাদি থেকে হয়। কারণ কেয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্যে নারীদের সংখ্যাই বেশি হবে। একথা শুনে জনৈকা মহিলা জিজ্ঞেস করলেন, মহিলাদের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ কি..? জবাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কারণ (কথায় কথায়) তোমরা অভিশাপ দাও এবং স্বামীর অবাধ্য হও।
(মুসনাদে আহমাদ হাদীস নং-৪০৩৬)
৩. হযরত আয়েশা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, একবার তিনি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা জানি যে আজ সর্বশ্রেষ্ঠ আমল, তবুও কেন আমাদেরকে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয় না..?
জবাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের জন্য তার চেয়েও উত্তম জিহাদ হলো মাকবূল হজ্ব।(অর্থাৎ, যে হজ সবধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও গুনাহ থেকে মুক্ত।)
(বুখারী শরীফ হাদিস নং-২৭৪৩)
৪. হুজাইফা ইবনে ইয়াসির (রাযি.) তাঁর দাদী থেকে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কে বলেছেন, তোমরা এই তাসবীহ গুলো বেশি বেশি পড়ো—
سبحان الملك القدوس سبحان الله لا اله الا الا الله
উচ্চারণ: সুবহানাল মালিকিল কুদ্দুস সুবাহানাল্লাহ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু।
(মিরকাত-৫/২২৬)
এবং তা আঙ্গুলে গণনা করে পড়ো, কেননা কেয়ামতের দিন এগুলো জিজ্ঞাসিত হবে। আর আল্লাহর জিকির থেকে কখনো গাফেল থাকবে না, অন্যথায় তাঁর রহমত থেকে বঞ্চিত হবে।
(আবু দাউদ হাদিস নং ১৫০১, তিরমিযী হাদিস নং ৩৫৮৩)
৫. হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক মহিলা সম্পর্কে বলা হলো, অমুক মহিলা দিনে রোজা রাখে আর সারারাত ইবাদত বন্দেগী করে, কিন্তু সে কটু কথা বলে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন লাভ নেই, সে জাহান্নামে যাবে। আর এক মহিলা সম্পর্কে বলা হলো যে,সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে রমজান মাসে রোজা রাখে, এবং সে যথাসাধ্য দান-সদকা করে, কিন্তু কাউকেও কষ্ট দেয় না, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বললেন সে জান্নাতে যাবে।
(মুসতাদরাকে হাকেম হাদিস নং-৭৩০২)
৬. হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি.) বলেন, একবার মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈকা আনসারী মহিলাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি ব্যাপার..?তুমি আমার সাথে হজ্বে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছ না কেন..? জবাবে মহিলা বললেন, আমাদের মাত্র দুইটি উট, তন্মধ্য থেকে একটি আমার স্বামী ও তার ছেলে হজ্ব করার জন্য নিয়ে গেছে। অপরটি দিয়ে আমাদের খেয়ে পানি সিঞ্চন করি। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, আগামী রমজান মাসে ওমরা করে নিও। কেননা রমজান মাসে উমরার সওয়াব হজের সমতুল্য। অন্য রিওয়ায়েতে আছে আমার সাথে হজ্ব করার সমতুল্য।
(বুখারী শরীফ হাদিস নং ১৭৮২)
৭. উম্মে সালামাহ (রাযি.) বলেন নবী সালালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন (মুমিনা) নারী স্বামীকে সন্তুষ্ট রেখে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
(তিরমিজি শরীফ হাদিস নং-১১৬১)
৮. হযরত হুসাইন ইবনে মিহসান (রাযি.) থেকে বর্ণিত, একবার তার ফুফু কোন এক প্রয়োজনে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে আসলেন।প্রয়োজন পূর্ণ হলে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সম্বোধন করে বললেন, তোমার স্বামী কি জীবিত আছে ..? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ। পুনরায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তার সাথে কেমন ব্যবহার করো..? জবাবে তিনি বললেন, সাধ্যানুযায়ী তার খেদমত করে থাকি। অতঃপর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (সাবধান করে) বললেন, ভালো করে চিন্তা করো, তুমি তার কতটুকু খেদমত করে যাচ্ছ। কেননা সেই তোমার জান্নাত, আবার সেই তোমার জাহান্নাম। (অর্থাৎ তাকে সন্তুষ্ট রাখতে পারলে জান্নাত লাভ করবে, অন্যথায় জাহান্নাম)
(মুসনাদে আহমাদ হাদীস নং-১৯০২৭)
৯. হযরত ইবনে আবী আউফ (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত মু'য়াজ ইবনে জাবাল (রাযি.) একবার সামনে থেকে আসার পর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মু'য়াজ..! তুমি একি করছো..? জবাবে মু'য়াজ (রাযি.) বললেন, আমি সামনে থেকে এসেছি, সেখানের অধিবাসীরা তাদের সেনাপতি ও ধর্মযাজকদেরকে এভাবে সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। তাই আমিও আপনাকে সেভাবে সম্মান প্রদর্শন করলাম। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এরকম কাজ করতে নিষেধ করে বললেন, আমি যদি কাউকে সেজদা করার আদেশ দিতাম, তাহলে শুধু নারী জাতিকে আদেশ দিতাম যে, তোমরা তোমাদের স্বামীদের কে সম্মান করার লক্ষ্যে সিজদা করো। ওই সত্তার কসম যাঁর কুদরতী হাতে আমার প্রাণ, কোনো নারী তার প্রতিপালকের হক্ব আদায় করতে পারবে না যতক্ষণ না সে তার স্বামীর হক পরিপূর্ণভাবে আদায় করবে।(স্ত্রীর উপর স্বামীর হক্ব এত বেশি যে) সফরের প্রাক্কালে সওয়ারির পিঠে থাকা অবস্থায়ও যদি স্বামী স্ত্রীকে আহ্বান করে তাহলেও সে নিষেধ করতে পারবে না।
(সহীহ ইবনে হিব্বান হাদিস নং-৪১৭১)
১০. হযরত আবু হুরায়রা(রাযি.) বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা'আলা ঐ মহিলার উপর রহম করুন, যে মহিলা শেষ রাতে ওঠে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে। এবং স্বামীকেও (তাহাজ্জুদের জন্য) জাগিয়ে দেয়। (স্বামী) ঘুম থেকে উঠতে না চাইলে মুখে পানি ছিটিয়ে দিয়ে হলেও উঠানোর চেষ্টা করে। অন্য হাদিসে গুণ সম্পন্ন স্বামীর জন্য মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করেছেন।
(মুসনাদে আহমদ হাদিস নং-৭৪১০)
১১. হযরত আবু হুসাইন আসে সায়েদী (রাযি.)-এর স্ত্রী উম্মে হুমাইদ একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার সাথে জামাতে নামাজ পড়তে আমার ভালো লাগে। একথা শুনে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা আমি জানি। তবে শোনো, তোমার জন্য তোমার ঘরের অভ্যন্তরে নামাজ পড়া বারান্দার কামড়ায় নামাজ পড়ার চেয়ে উত্তম। আবার বারান্দার কামড়ায় নামাজ পড়া তোমার জন্য তোমার ঘরের আঙ্গিনায় নামাজ পড়ার চেয়ে উত্তম। এবং তোমার ঘরের আঙ্গিনায় নামাজ পড়া তোমার জন্য তোমার মহল্লার মসজিদে নামাজ পড়ার চেয়ে উত্তম, একইভাবে তোমার মহল্লার মসজিদে নামাজ পড়া তোমার জন্য আমার মসজিদে এসে আমার সাথে নামাজ পড়ার চেয়ে উত্তম।
হাদীসের বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শোনার পর তিনি পরিবারের লোকেদের ঘরের ভিতরে নামাজের স্থান বানাতে বললেন। তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী তা নির্মাণ করা হলো। এরপর তিনি মৃত্যু পর্যন্ত এখানে নামাজ পড়তে থাকেন।
(সহীহ ইবনে হিব্বান হাদিস নং-২২১৭)
১২. হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাযি.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,প্রিয় নবী সালাম আলাই সাল্লাম এর ইন্তেকালের পর মহিলাদের মধ্যে যে ধরনের পরিবর্তন এসেছে সেটা যদি তিনি দেখতেন তাহলে নিঃসন্দেহে তিনি তাদেরকে মসজিদে আশা থেকে নিষেধ করতেন। যেভাবে নিষেধ করা হয়েছিল বনী ইসরাঈলের মহিলাদেরকে।
(বুখারী হাদিস নং-৮৬৯)
১৩. হযরত আয়েশা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন নারী যখন পারিবারিক তহবিল থেকে স্বামীর অনুমতিক্রমে সংসারের ক্ষতি না করে দান করে তখন এই খরচ করার কারণে তার আমলনামায় সওয়াব লেখা হয়। এবং কোষাধ্যক্ষের আমলনামায়ও লেখা হয়। (কারণ সে ক্যাশ সংরক্ষণ করে)।
(বুখারী শরীফ হাদিস নং-২০৬৫)
১৪. হযরত আবু হোরায়রা (রাযি.) বর্ণনা করেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন মুসলমান রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হলে, বা দুর্দশা ও বিপদগ্রস্ত হলে অথবা দুশ্চিন্তা বা পেরেশানিতে পড়লে, এমনকি শরীরের কোথাও কাটা বিঁধলে এর দ্বারা আল্লাহ তা'আলা তাঁর (সগীরাহ) গুনাহ মাফ করে দেন।
(বুখারী শরীফ হাদিস নং-৫৬৪১)
মুসলিম বোনেরা..! উপরোক্ত হাদিসগুলো গভীরভাবে পড়ুন। এবং উপদেশ গ্রহণ করুন। আর ক্ষণস্থায়ী জীবনের বিভিন্ন ধরনের ক্লেশ-যাতনা যেমন: গর্ভধারণ, সন্তান প্রসব, বাচ্চাদের দুধ পান করানো ও লালন-পালন করা, হায়েয নিফাস ইত্যাদি কষ্ট-ক্লেশের সম্মুখীন হয়ে পেরেশান হবেন না। এ সবকিছুই আপনার নেক আমল নামা ভারী করবে। সগিরা গুনাহ সমূহের কাফ্ফারা হবে। সর্বোপরি জান্নাতে আপনার দরজা বন্ধ করবে। তাই সাধ্যমতো স্বামীর সেবা যত্ন করুন এবং নিজেদের অন্দরমহলে নামাজ আদায় করুন। কারণ ফিকাহবিদগণ বিভিন্ন হাদিসের আলোকে মহিলাদের মসজিদে গমনকে কাজ সাব্যস্ত করেছেন।
(দুররে মুখতার ১:৮৩, ফাতাওয়া আলমগীরী ১:৮৯)