পুরুষদের জন্য টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা কি..? | PUSHPKOLI

শরীয়তের দৃষ্টিতে পুরুষের জন্য টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা হারাম।
মুফতি মনসুরুল হক সাহেব (দা:বা:)

পুরুষের জন্য টাখনু (পায়ের গিরা)-র নিচে জামা,পায়জামা,প্যান্ট,লুঙ্গি ইত্যাদি কাপড় পরা সর্বাবস্থায় (নামাজ কিংবা নামাজের বাহিরে) হারাম।
এ সম্পর্কে বহু হাদীস শরীফে কঠিন শাস্তির ধমকি বর্ণনা হয়েছে। তাম্মধ্যে, হযরত আবু হুরায়রাহ (রিযি.) থেকে বর্ণিত রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন "লুঙ্গি বা কাপড়ের যে অংশটুকু টাখনুর নিচে থাকবে তা জাহান্নামে যাবে"। অর্থাৎ পরিধানকারী এই অপরাধের জাহান্নামী সাব্যস্ত হবে।
(বুখারী শরীফ হাদিস নং-৫৮৮৭)

হযরত আবু হুরায়রাহ (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন "আল্লাহ তা'আলা ঐ ব্যক্তির প্রতি (রহমতের) দৃষ্টিতে তাকাবেন না, যে লুঙ্গি, কাপড় ইত্যাদি অহংকারবশত: টাখনুর নিচে পরিধান করে।
(বুখারি হাদিস নং-২/৮৬২-৮৬৩, আবু দাউদ শরীফ-২/৫৬৬, ইবনে মাজাহ শরীফ-২৫৫)

উল্লেখ্য পুরুষদের জন্য টাকনুর নিচে কাপড় পরিধান করাটাই অহংকার এর আলামত,চাই তার অন্তরে যাই থাকুক সুতরাং একথা বলা অনর্থক যে আমি টাকার নিচে কাপড় পড়লে ও আমার অন্তরে কোন অহংকার নেই। এটা সেই ভিত্তিহীন দাবি অনুরূপ, যে আমি নামাজ না পড়লেও আমার ঈমান ঠিক আছে অথচ হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিল সে কুফরি কাজ করলো।
(মুসলিম শরীফ হাদিস নং ৮২, আবু দাউদ শরীফ হাদিস নং ৪৬৭৮)

টাখনুর নিচে সাধারণত: অহংকারী ব্যক্তিরা পোশাক পরিধান করে থাকে। এইসবে কিছু সংখ্যক হাদিসে অহংকারীদের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, অহংকার ব্যতীত টাকনুর নিচে কাপড় পড়া যাবে। এ ব্যাপারে অনেক মানুষ ভুলের মধ্যে আছে। টাখনুর নিচে কাপড় পড়লে তার অন্তরে যাই থাকুক এর দ্বারা অহংকার প্রকাশ পায় তাই সর্ব অবস্থায় পুরুষদের জন্য টাকনুর নিচে একমাত্র মোজা ব্যতীত অন্য কোনো পোশাক পরা হারাম।

হযরত আবু সাঈদ (রাযি.) বর্ণনা করেন আমি রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: মুমিনের কাপড় নিসফে সাক অর্থাৎ (হাটু ও টাখনুর মধ্যবর্তী স্থান) পর্যন্ত, তবে নিসফে সাকের নিচে টাখনুর উপর পর্যন্ত ঝুলিয়ে পড়ায় কোনো অপরাধ নাই।
(আবু দাউদ শরীফ হাদিস নং ৪০৯৩, ইবনে মাজাহ শরীফ হাদিস নং ৩৫৭৩)

তাছাড়া সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) থেকেও নিসফে সাকের নিচে টাখনুর উপর পর্যন্ত কাপড় পরিধান করা প্রমাণিত আছে।
(বুখারী শরীফ হাদিস নং ৪৪২, মুসলিম শরীফ হাদিস নং ৪৩১)

সুতরাং নিসফে সাক পর্যন্ত কাপড় পরিধান করা সর্বোচ্চ সতর্কতায় এবং টাখনুর উপর পর্যন্ত পরিধান করা জায়েযের সর্বশেষ সীমা, তবে এ অবস্থায় খুবই সতর্ক থাকতে হবে যাতে সামান্য অসাবধানতার কারণে কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে না যায়। প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব যে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিধানের উপর কায়েম থাকা এবং শরীয়তের সীমারেখা কোন অবস্থায় লংঘন না করা।

বি: দ্র: টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে প্যান্ট-পায়জামা ইত্যাদি পড়া বিধর্মীদের শিক্ষা ও তাদের কৃষ্টি কালচারের অন্তর্গত। এই ধরনের পোশাক পরিচ্ছদ পরিধান করলে, গায়রে কাওমের অনুসরণ করা হয়। যা দ্বারা আমাদের দ্বীনি চেতনার অভাব প্রকাশ পায়। তাই মুসলমানদের এ ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকা অতি জরুরী।
(ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/১২২, ইমদাদুল আহকাম ২/১৭৯, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া ২/১৪০, ফাতাওয়া রাহমানিয়া ৭/২৮৪-২৮৮, তাকমীলে ফাতহুল মুলহিম ৪/১২৩)
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url