তারাবির নামাজ ২০ রাকাআত এর প্রমাণ
তারাবির নামাজ ২০ রাকাআত এর প্রমাণ
মুফতি মনসুরুল হক সাহেব (দা: বা:)
হযরত ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম (রহঃ) এর ওস্তাদ আবু বকর ইবনে শাইবা (রহঃ) এর কিতাব আল মুসান্নাফ পৃ:২/১৬৬, হাদিস নং ৭৬৯১, এছাড়া হাদিসের প্রসিদ্ধ কিতাব বাইহাকী পৃ:২/৬৯৮, হাদীস নং ৪৬১৫,৪৬১৭, তাবরানী পৃ:১১/২৬১, হাদিস নং ৭৭৩৩,
"হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি:) থেকে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদিসের রাসুল সাল্লাল্লাহু এর আমল দ্বারা ২০ রাকাআত তারাবিহ নামাজ প্রমাণিত।"
(আন-নুকাত আলা মুকাদ্দামাতি ইবনিস সালাহ্-১/৩৯০, আন-নুকাত আলা কিতাবি ইবনি সালাহ্-১/৪৯৪)
দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাযি:) তার খেলাফত আমলে মসজিদে নববীর মধ্যে তারাবিহ নামাজের অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জামাতকে একত্র করে হযরত উবাই বিন কাআব (রাযি:) এর ইমামতিতে ২০ রাকাআত তারাবিহ নামাজের হুকুম দিয়েছেন। সকল সাহাবায়ে কেরাম (রাযি:) তার সমর্থন করেছিলেন। তারাবীহ নামাজ যদি নবী আলাইহিস সালাম থেকে ২০ রাকাআত প্রমাণিত না হতো তাহলে সাহাবায়ে কেরাম (রাযি:) অবশ্যই আপত্তি তুলতেন–(বায়হাকী পৃ:২/৪৯৭, হাদীস নং ৪৬১৭,৪৬২০,৪৬২১, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক পৃ:৪/২৬১, হাদীস নং ৭৭৩২, বুখারী পৃ:১/৪৭৪, হাদিস নং ২০১০, নাজমাউ সাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া-২৩/১১২-১১৩ বাদায়েউস সানায়ে-১/৬৪৪)
তৃতীয় খলীফা হযরত ওসমান গনী (রাযি:), চতুর্থ খলীফা হযরত আলী (রাযি:) সহ সাহাবায়ে কেরামের (রাযি:) ঐক্যমতে, উম্মতে মুসলিমার ১৪০০ শত বছর পর্যন্ত ধারাবাহিক আমল তারাবীহ নামাজ ২০ রাকাআত চলে আসছে ।যা আজ পর্যন্ত বাইতুল্লাহ শরীফ ও মসজিদে নববীতে চালু আছে–(বাইহাকী কুবরা পৃ:২/৪৯৬, হাদিস নং ৪৬১৭,পৃ:২/৪৯৭, হাদিস নং ৪৬২০,৪৬২১,শরহুল মুহাজ্জাব পৃ:৩/৩৬৩-৩৬৪)।
ইমাম আ'জম আবু হানীফা (রহ.), ইমাম মালেক (রহ.), নাম শাফেয়ী (রহ.), ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ:) যারা প্রত্যেকে স্বীয় জামানায় সব চেয়ে বড় কোরআন ও হাদিস বিশারদ ও ফিকাহ ছিলেন তাদের সকলের মতে তারাবীহ নামাজ ২০ রাকাআত, ৮ রাকাআত নয়।
আলমাবসূত পৃ:২/১৯৬, ই'লাউসসুনান পৃ:৭/৬৯/৭১,আততামহীদ পৃ:৩/৫১৮, আলমুদাউওয়ানাতুল কুবরা পৃ:১/২৮৭, শরহুস্ সুন্নাহ পৃ:২/৫১১, মুগনী পৃ:২/৬০৪)
আট রাকাআত তারাবীহ নামাজ পড়া রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমল ও সাহাবায়ে কেরাম (রাযি:)-এর ইজমা পরিপন্থী এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলের বিপরীত, অথচ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোলাফায়ে রাশেদীনের অনুসরণের জন্য তাকে করে গেছেন।
(আবু দাউদ হাদিস নং-৪৬০৭, তিরমিযী হাদিস নং২৬৭৬, ইবনে মাজাহ হাদিস নং ৪২-৪৩)
আট রাকাআত নামাজের হাদীসটি ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম রহ অন্যান্য মুহাদ্দিসীনে কেরামের মতে একান্তভাবে তাহাজ্জুদের জন্য প্রযোজ্য। কোন অবস্থায় তা তারাবীহ নামাজের জন্য প্রযোজ্য নয়, এজন্য তারা এই হাদীসটি তাদের কিতাবে তাহাজ্জুতের অধ্যায় এনেছেন, তারাবীহ অধ্যায় তারাবীহ নামাজের রাকাআতের সংখ্যা পরিমাণের জন্য আনেননি। তাছাড়া উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা (রাযি:) থেকে বর্ণিত হাদীসটি এমন এক ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তর যার ধারণা ছিল নবী আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানে অন্য মাসের তুলনায় তাহাজ্জুদ নামাজ অনেক বেশি পড়তেন, তার প্রশ্নের জবাবে বলেছেন যে,"নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানে ও রমজানের বাহিরে অন্যান্য মাসে আট রাকাআতের বেশি তাহাজ্জুত নামাজ পড়তেন না।"
এখানে তিনি এমন নামাজের কথা আলোচনা করেছেন যা রমজান শরীফে এবং রমজান ছাড়া অন্য মাসে ও পড়া যায়। আর তারাবীহ নামাজ রমজান ছাড়া অন্য মাসে পড়া যায় না। কাজেই এ হাদীস দ্বারা কাস্মিনকালেও তিনি তারাবীহ নামাজ ৮ রাকাত বুঝেননি। বরং তাহাজ্জুতের নামাজ ৮ 8 রাকাআত বুঝিয়েছেন। যা রমজান ও রমজান এর বাহিরে ও পড়া যায়।
অত্যন্ত দুঃখজনক যে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার জন্য কতক লোক যারা হাদীসের মর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ তারা এ হাদীসের দ্বারা তারাবীহ নামাজ ৮ রাকাআত প্রমাণ করে, যা নিতান্তই বোকামী।(বুখারী পৃ: হাদিস নং ১১৪৭, বুখারি হাদিস নং ২০১৩)
তারাবির নামাজ মাত্র ৮ রাকাআত মনে করে পড়লে তা একাধারে নবী সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর আমল খোলাফায়ে রাশেদীন এর আমল এবং সাহাবায়ে কেরাম (রাযি:) ইজমা ঐক্যমতের পরিপন্থী হওয়ার জন্য বিদআত এবং মনগড়া এবাদত হবে। যা নবী কারিম সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস অনুযায়ী গোমরাহী এবং জাহান্নামের আমল।এর থেকে বেঁচে থাকা সকল মুমিনের ঈমানী দায়িত্ব।(বুখারি হাদিস নং ২৬৯৭, মুসলিম হাদিস নং ১৭১৮, আবু দাউদ হাদিস নং ৪৬০৬, ইবনে মাজাহ হাদিস নং১৪)
তারাবীহ নামাজের বেতের সহ ৪ রাকাত পরপর ৫ টি বিরতি। (বায়হাকী হাদিস নং ৪৬২১, হিদায়া পৃ:১/১৫০, ফতোওয়ায়ে তাতারখানিয়া পৃ: ১/৬৫৪)
তারাবীহা অর্থ বিশ্রাম করা, তার বহুবচন তারাবীহ। শব্দটি বহু বচন হওয়াটা দলিল যে এ নামাজে দু'এর অধিক বিরতি বিশ্রাম হওয়া জরুরী। তারাবীহ ৮ রাকাত হলে তা কখনো সম্ভব হবে না।
তারাবীহ সহ সকল প্রকার নামাজে তাজবীদের সাথে তেলাওয়াত করা জরুরি। তাজবীদ বিহীন অস্পষ্ট অতি দ্রুত তেলোয়াত শরীয়তে নিষেধ। (সূরা মুজাম্মিল ৪, তাফসীরে মাযহারী পৃ:৯/১০, তালিফাতে রশিদিয়া পৃ:২৬৯)
*খতমে তারাবীহ নামাজের পারিশ্রমিক দেয়া ও নেয়া ও বইটা নিষিদ্ধ ও গুনাহের কাজ। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা হাদিস নং৭৭৩৮,৭৭৪২, ফতোওয়ায়ে শামীপৃ:৫/৫৬, ইমদাদুল মুফতিন পৃ:৩১৫, আহসানুল ফতোয়া ৩/৫১২, ফতোওয়ায়ে দারুল উলুম৪/২৭৩)